Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য

 

শিশুর স্বাস্থ্য

শিশুর চোখের সমস্যা

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত এই প্রজন্মের সুস্থতার উপর দেশ ও দশের এগিয়ে যাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। শারীরিক ও মানষিক সুস্থতার পাশাপাশি চোখের সুস্থতাও সমান গুরুত্ব বহন করে।

গুরুত্বঃ দৃষ্টিহীন শিশুকে অন্যের উপর নির্ভর করে সারাজীবন কাটাতে হয়। এতে দেশ দুই জন মানুষের পূণর্াঙ্গ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও পর নির্ভরশীলতার কারণে শিশু মানষিকভাবেও বির্পযস্ত হয়ে পড়ে।

দৃষ্টিস্বল্পতার কারণ: ্ক জন্মগত ছানি ্ক পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা ্ক কর্ণিয়ার ঘা ্ক চোখে আঘাত ্ক চোখের ক্যান্সার (রেটিনোবস্নাস্টমা) ্ক চোখের প্রদাহ (ইউভাইটিস)

শিশুর চোখের অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের চুলকানী বা অ্যালার্জী এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া অন্যতম।

ছানিঃ জন্মের পর পর বা কিছুদিন পর এক বা উভয় চোখে সাদা আস্তর দেখা যাওয়া ছানিরোগের লক্ষণ। ডেলিভারীর সময় চোখে আঘাতের কারণে, গর্ভকালীন মায়ের রুবেলা জ্বর, বিভিন্ন ওষুধ সেবন এবং বংশগত কারণে শিশুর চোখের ছানি পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরবতর্ীতে সময়মত কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে।

পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা: ঘনঘন চোখ নড়াচড়া করা, চোখ বেঁকে যাওয়া, বস্তু অনুসরণ না করতে পারা, ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, কাছে গিয়ে টেলিভিশন দেখা, মাথাব্যাথা করা ইত্যাদি দৃষ্টিস্বল্পতা লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কর্ণিয়ার ঘা: অপুষ্টি জনিত কারণে ভিটামিন এর অভাবে দুই চোখে ঘা হতে পারে। এছাড়াও ডেলিভারীর সময়ে চোখে আঘাতের কারণে এবং জন্মের পরে যে কোন সময়ে জীবানু সংক্রমনের কারণে চোখে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা, আলোতে চোখ খুলতে না পারা, চোখ লাল হওয়া, কালোমনিতে সাদা দাগ পড়া এ রোগের লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের জীবানু পরীক্ষা করে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

চোখের ক্যান্সারঃ বিড়ালের চোখের মত চোখ জ্বল জ্বল করা, চোখ লাল হওয়া এই রোগের লক্ষণ, চোখে ব্যথা হওয়া, চোখ বেঁকে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি চোখের ক্যান্সার বা রেটিনোবস্নাসটোয়ার লক্ষণ। এই সব লক্ষণ দেখামাত্র দেরী না করে চক্ষু বিশেজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চোখের ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

চোখের অ্যালাজর্ী :ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, চোখ কচলানো, চোখ লাল হওয়া, শুষ্ক মৌসুমে এই রোগ রোগ বেশী দেখা যায়। বছরে ২/৩ বার চোখে অ্যালাজর্ী হতে পারে। ধুলাবালি, ধুঁয়া, বিভিন্ন খাবার এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থে শরীরে এবং চোখে অ্যালাজর্ী হতে পারে।

চোখ দিয়ে পানি পড়া: জন্মগতভাবে চোখের পানি সরে যাবার নেত্রনালী বন্ধ থাকলে চোখের পানি উপচে পড়ে। এতে চিন্তিত হবার কিছু নাই। ১-২ বছরের মধ্যে বন্ধনালী আপনাতেই খুলে গেলে চোখের পানি পড়া অনেকাংশে কমে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চোখের কোণায় মালিশ করা এবং চোখে ড্রপ ব্যবহারে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

পরিশেষে বলতে হয়, শিশুরা অনেক কিছু বলে বোঝাতে পারেনা। ফলে তাদের সমস্যাগুলো অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। এ সকল সমস্যা শেষ পর্যন্ত শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং শিশুর দৃষ্টি অধিকার রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।

**************************

ডাঃ শামস মোহাম্মদ নোমান

চক্ষু বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম

 

 

শিশুর জ্বরের কারণে খিঁচুনি হলে...

কেস স্টাডি
আমরিনের বয়স দেড় বছর। খুব হাসি-খুশি ও চঞ্চল। গত দুই দিন ধরে তার শরীরটা ভালো নেই। সর্দি, কাশি ও জ্বরে কাবু হয়ে পড়েছে। বাব-মা ভাবলেন, ভাইরাসজনিত সাধারণ জ্বর, এমনিতেই সেরে উঠবে। আজ জ্বরের প্রকোপ আরও বেড়েছে। জ্বর ১০২০ ঋ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর আমরিন যেন কেমন করতে লাগল, জ্ঞান হারিয়ে ফেলল, হঠাত্ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, দাঁত-চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, হাত-পা বাঁকা হয়ে যেতে লাগল, সারা শরীর কাঁপতে লাগল। আমরিনের বাবা-মা এ অবস্থা দেখে অত্যন্ত ঘাবড়ে গেলেন। আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে ছুটে গেলেন । আমরিনের এই লক্ষণটাই হলো ‘জ্বরের কারণে খিঁচুনি’। যাকে ঋবনত্রধষ ঈড়হাঁষংরড়হ বলা হয়ে থাকে।

জ্বরের কারণে খিঁচুনি সম্পর্কে কিছু তথ্য
— সাধারণত ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী বাচ্চাদের এটি হয়ে থাকে।
— মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের এটি বেশি হয়ে থাকে।
— সাধারণত পারিবারিক ইতিহাস (Family history) থাকে ।
— খিঁচুনি সমস্ত শরীরব্যাপী (Generalised) হয়ে থাকে। শরীরের শুধু বিশেষ কোনো অংশে আদালাভাবে হয় না।
— জ্বর > ১০২০ F-এর উপর গেলেই এই খিঁচুনি হয়ে থাকে।
— এই খিঁচুনি অল্প সময় স্থায়ী হয়, সাধারণত ২০ মিনিটের কম স্থায়ী হয়।
— এই খিঁচুনি সাধারণত দিনে একবার (অর্থাত্ জ্বর > ১০২০ থাকলেও ২৪ ঘণ্টায় একবার) হয়।
— এই খিঁচুনির জন্য শরীর বা স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী কোনো ক্ষতি হয় না।

কী করবেন
সব বাবা-মাই ‘জ্বরের কারণে খিঁচুনি’তে আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মনে রাখবেন, এটি শিশুদের কোনো বিশেষ রোগ নয়। জ্বরের কারণে শিশুর শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। তাই আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত জ্বর কমাতে নিচের ব্যবস্থাগুলো নিন :
— শিশুর শরীর থেকে সব জমা-কাপড় খুলে ফেলুন।
— ভেজানো তোয়ালে/গামছা দিয়ে সারা শরীর বার বার মুছতে থাকুন।
— এই সময়ে ফুল স্পিডে ফ্যান চালিয়ে শিশুকে ফ্যানের বাতাসে রাখা যেতে পারে।
— দেরি না করে জ্বরের সিরাপ খাওয়ান অথবা মলদ্বারে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করুন।
— দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নিন ।
— প্রয়োজনে কাছের হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।


*************************
ডা. একেএম শাহিদুর রহমান
লেখক : মেডিকেল অফিসার
কিডনি রোগ বিভাগ, বিএসএমএমইউ, শাহবাগ, ঢাকা
shahidurahman80@yahoo.com

মহিলাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া

 

প্রস্রাবে প্রদাহ যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির পর থেকে বৃদ্ধ বয়সের যেকোনো সময়। মূল উৎস হচ্ছে অপরিচ্ছন্নতা, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, পায়ুনালী, ঘন ঘন কৃমি কর্তৃক সংক্রমণ, সহবাসের কারণে মূত্রনালীতে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। পায়ুনালী থেকেই, কোলাই নামক জীবাণু কর্তৃক শতকরা ৭০-৮০ ভাগ প্রস্রাবের প্রদাহ হয়ে থাকে। অন্যান্য জীবাণুর মধ্যে প্রোটিয়াস, ক্লেবসিনা ও সিওডোমনাসের নাম উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি স্টেফাইলোক্কাস স্কোরোফাইটিকাস নামক জীবাণু মেয়েদের ১৫ থেকে ৩০ ভাগ প্রস্রাবের কারণ।

জীবণু প্রস্রাবের পথে প্রবেশের পর মূত্রনালী দিয়ে ক্রমেই কিডনি পর্যন্ত যেতে পারে। প্রস্রাবের প্রদাহের প্রথম শর্ত হচ্ছে জীবাণু প্রস্রাবের রাস্তায় জমা হতে হবে। তবে যেকোনো কারণে প্রস্রাবের রাস্তায় জীবাণু জমতে পারে। জীবাণু সেখানে থেকে মূত্রথলিতে প্রবেশ করার পর প্রস্রাবের প্রদাহ হবে কি না তা নির্ভর করছে অনকে কারণের ওপর। এর মধ্যে মূত্রথলির প্রতিরোধ শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূত্রথলির ভেতরের দেয়ালে ইমিউনো গ্লোবিউলিন নামক একটি স্তর রয়েছে, যে জন্য জীবাণু মূত্রথলির কোষের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না।

প্রস্রাব এমনিতেই অ্যাসিডিক, এ অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকলে জীবাণু বাড়তে পারে না। শুধু তা-ই নয়, পরিমিত পানি খেলে প্রতিবার প্রস্রাবের মাধ্যমে মূত্রথলির ভেতর থেকে জীবাণু বের হয়ে যায়।
মূত্রথলির প্রদাহের উপসর্গ হচ্ছে, বারবার প্রস্রাবের বেগ হওয়া, প্রস্রাব করার সময় জ্বালা অনুভূত হওয়া, মাঝে মধ্যে তলপেটে ব্যথা হওয়া, কখনো কখনো পরিমাণে কমে গিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব হওয়া। এ অবস্থা সৃষ্টি হলে প্রস্রাবের রঙ ধোয়াটে ও দুর্গদ্ধযুক্ত হতে পারে। তবে একটি ব্যাপার খুবই লক্ষণীয়, তা হলো প্রস্রাব করে আসার পরপরই আবার প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা।

এই প্রদাহ ক্রমেই কিডনিকেও আক্রান্ত করতে পারে। এ অবস্থায় নাভীর দু’দিক থেকে পেছন পর্যন্ত ব্যথা ছড়াতে পারে। কেঁপে কেঁপে জ্বর আসতে পারে। প্রস্রাবের রঙ রক্ত বর্ণও হতে পারে। খওয়ায় অরুচি, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, সমস্ত শরীর ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। বাসর রাতের পর অথবা তারও দু-এক সপ্তাহ পর নববিবাহিত মেয়েরা মূত্রথলির প্রদাহে আক্রান্ত হতে পারে, একে হানিমুন সিসটাইটস বলে। অবশ্য প্রস্রাবের প্রদাহ ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি হয়। তবে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মহিলা বিশেষ করে যৌন সক্রিয় বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হয়। এর কারণ হচ্ছে মহিলাদের মলত্যাগের রাস্তা ও প্রস্রাবের রাস্তার মধ্যে দূরত্ব অনেক কম। কাজেই জীবাণু পায়ুনালীর রাস্তা থেকে প্রস্রাবের পথে সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
রোগের বিস্তারিত ইতিহাস, লক্ষণ, উপসর্গ ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা, কালচার করে জীবাণু নির্ণয় করা হয়। এ কালচার করার দু’টি দিক আছে, একটি জীবাণু বিঘ্নিতকরণ ও অপরটি এই বিঘ্নিত জীবাণুটির বিরুদ্ধে সঠিক ওষুধ বাছাই করা। এমন অনকে মহিলা আছে, যাদের প্রায়ই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার উপসর্গ থাকে এবং তাদের প্রস্রাব পরীক্ষা করলে শুধু শ্বেতকণিকা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রস্রাব কালচার করলে কোনো জীবাণু পাওয়া যায় না, আর যদি জীবাণু পাওয়াও যায় তার পরিমাণ খুবই কম থাকে। মহিলাদের এ অসুবিধাকে ইউরেথ্রাল সিনড্রোম বলা হয়। বর্তমানে এ ইউরেথ্রাল সিনড্রোম সম্বন্ধে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর দেখা গেছে এর শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে সত্যিকারের কোনো প্রদাহ থাকে না।


**************************
ডাঃ মিজানুর রহমান কল্লোল
লেখকঃ জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন। চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড (বাটা সিগনাল ও হাতিরপুল বাজারের সংযোগ সড়কের মাঝামাঝি), ঢাকা।

 

পৃথিবী হোক পোলিওমুক্ত

 

পৃথিবী পোলিওমুক্ত করার প্রয়াস শুরু হয়েছিল দুই দশকেরও আগে থেকে। ১৯৮৮ সালে পোলিও ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হওয়ার পর এতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ঝঃড়ঢ় চড়ষরড় ঋড়ৎবাবৎ-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ বিশ্ব পোলিও দিবস পালিত হচ্ছে।

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে পোলিওর অভিশাপ মানুষ শতাব্দীকাল পর্যন্ত বহন করে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পোলিও মহামারীতে ৬ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছিল এবং ২৭ হাজার লোক পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাম্বয়ে হ্রাস পেতে পেতে ২০০৭ সালে ২০০৬ থেকে ৫৮ শতাংশ কমে গেছে। সারাবিশ্বে ২০০৭ সালে মাত্র ৬১৩ জন পোলিও আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালে এ সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬০ জনে।
২০০৮ সালের তথ্যানুযায়ী বিশ্বব্যাপী পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নরূপঃ
দেশ ২০০৮ ২০০৭ ২০০৬
নাইজেরিয়া ৬৯২ জন - -
ভারত ৪৪৯ জন ২৮১ ৬৭৬
পাকিস্তান ৬৭ জন - -
সেন্ট্রাল আফ্রিকা ২৫ জন - -
আফগানিস্তান ২০ জন - -
নেপাল ২ - -
বাংলাদেশ ০ ০ ১৮
উপরের চিত্র অনুযায়ী ভারতে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ২০০৬-এর তুলনায় ২০০৭ সালে কমলেও ২০০৮ সালে আবার বেড়েছে। ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার অঙ্গরাজ্য, আফগানিস্তান ও নাইজেরিয়ার উত্তর প্রদেশেই এ আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসাবে দুর্গম পাহাড়ি জনপদ, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং নোংরা ময়লা পুঁতিগন্ধময় পরিবেশে বসবাস ও ধর্মীয় গোঁড়ামিকে দায়ী করা হচ্ছে। এসব দেশ থেকে পোলিও ধীরে ধীরে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
পোলিও বা পোলিওমাইলাইটিস বা ইনফেনটাইল পোলিও একটি অতি প্রাচীন ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এ সংক্রামক রোগটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে। পোলিও ভাইরাস একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত এ রোগের জীবাণু (ভাইরাস) মানুষের মলের সাহায্যে ছড়িয়ে থাকে। মল থেকে ভাইরাস হাত ও মাছি দ্বারা বাহিত হয়ে খাদ্য বা দূষিত পানির মাধ্যমে পেটে ঢুকে, পরবর্তীতে রক্তের সঙ্গে মিশে স্নায়ুতন্ত্রের কোষকে ধ্বংস করে দেয়।
যে কোনও বয়সের মানুষই পোলিও ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয় এবং দুই বছরের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
পোলিও ভাইরাস তিন প্রকারঃ টাইপ ১, ২ ও ৩। সৌভাগ্যবশত টাইপ ২ পৃথিবী থেকে দূরীভূত হয়েছে; কিন্তু টাইপ ১ ও ৩ এখনও মানবজাতির জন্য বড় হুমকির কারণ।
লক্ষণ
ষ ৯৯ শতাংশ পোলিও আক্রান্ত রোগীর দেহে রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এদের দেহে পোলিও ভাইরাস ঢুকে কোনরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এ রোগীরা নিজের জন্য সমস্যা না হলেও সমাজে পোলিও ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে পারিপার্শ্বিক অন্য মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
ষ বাকি ১ শতাংশ পোলিও আক্রান্ত রোগীর শরীরে লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং একে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এবরটিভ পোলিও
৯৩ থেকে ৯৯ শতাংশ পোলিও রোগী এ জাতীয়। এর লক্ষণ সাধারণ ফ্লু জ্বরের মতো। জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, বমি বা বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঘাড় হালকা শক্ত হতে পারে।
নন-প্যারালাইটিক পোলিও
১ থেকে ৫ শতাংশ পোলিও রোগ নন-প্যারালাইটিক টাইপের হয়। এক্ষেত্রে রোগী আলো সহ্য করতে পারে না, ঘাড় প্রচণ্ডভাবে শক্ত হয়ে থাকে এবং ঘাড় নাড়াতে গেলে রোগী বেশ ব্যথা অনুভব করে। কিন্তু কোনও অবশভাব থাকে না।
প্যারালাইটিক পোলিও
০·১ থেকে ২ শতাংশ রোগীর প্যারালাইটিক পোলিও হয়। এ পোলিওতে রোগীর এক বা একাধিক হাত বা পা অবশ (পক্ষাঘাত) হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি পা অবশ হয়। প্যারালাইটিক পোলিওতে আক্রান্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রোগীর স্নায়ুতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে অবশ হয়ে যায় এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এটা রোগীর মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পোলিও রোগীর অবশতা সম্পূর্ণ স্থায়ী এবং এটা সারা জীবন থেকে যায়। যদি পোলিও ভাইরাস মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে তবে রোগীর ঢোক গিলতে বা খেতে অসুবিধা হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং মুখের এক পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে।
পোলিও ভাইরাস অণুজীবের বিরুদ্ধে কোনও এন্টিভাইরাস ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি এবং এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কোন অঙ্গ অবশ হয়ে গেলে সে অঙ্গ আর কখনোই কার্যক্ষম হয় না।
পোলিও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনও ওষুধ না থাকলেও এটা প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত কার্যক্ষম দুই ধরনের প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। ওচঠ টিকা মাংসে দেয়া হয় এবং এটা বিজ্ঞানী সক আবিষ্কার করেছেন। মুখে খাওয়ার আরেক ধরনের টিকা আবিষ্কার করেছেন সেবিন। এ দুই টিকাই সমানভাবে কার্যকর।
পৃথিবীকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করার অভিপ্রায়ে ষেড়নধষ ঢ়ড়ষরড় বৎধফরপধঃরড়হ ঢ়ৎড়মৎধসসব-এর আওতায় বাংলাদেশেও ন্যাশনাল ইমমিউনাইজেশন ডে (ঘওউ) প্রোগ্রাম চালু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। প্রতি বছর দু’বার দুই ডোজ পোলিও খাওয়ানোর জন্য বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচের প্রায় তিন কোটি শিশুকে এদিন দুই ফোঁটা পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো হয়। ফলে বাংলাদেশে পোলিও কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় নেমেছিল। পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণা করার যখন সময় এসেছিল তখনই অর্থাৎ ২০০৬ সালে ১৮ জন পোলিও আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। সৌভাগ্যবশত ২০০৬ সালের ২২ নভেম্বরের পরে এদেশে আর কোনও পোলিও রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কিন্তু এতে আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ১ লাখ ৪৩ হাজার বর্গকিলোমিটারের বাংলাদেশের তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ভারত। সেখানে এখনও পোলিওমুক্ত করা সম্ভব হয়নি, যে কোন সময় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এ ভাইরাস বর্ডার পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে যেতে পারে। তবে সুখের বিষয় এই যে, ডঐঙ-এর ডাইরেক্টর জেনারেল মার্গারেট চান ঘোষণা দিয়েছেন, অচিরেই ভারতকে পোলিওমুক্ত করে পৃথিবীর ইতিহাসের মাইলস্টোন অর্জন করবে।
এ সুন্দর পৃথিবী থেকে পোলিওর অভিশাপ দূর করার জন্য এ রোগের প্রত্যেকটি কোণা চিহ্নিত করতে হবে এবং পোলিও ভ্যাকসিন পৌঁছাতে হবে সেই সব জায়গায় যেখানে পোলিও ভাইরাস আজও তার কুৎসিত মাথা উঁচু করে আক্রান্ত করে চলছে একের পর এক সুন্দর শিশুকে।


**************************
ডা· মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো ইন্টারোলজি, নিউট্রিশন ও হেপাটোলজি বিভাগ